Class 7 Sahityamela
ভাটিয়ালি গান
অধ্যায় ৩২
ভাটিয়ালি গান
ও আমার দরদী আগে জানলে…
কন্যা সোনার বরণা।
-গানটি শিক্ষক-শিক্ষিকার সাহায্য নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা গাইতে চেষ্টা করো।
ভাটিয়ালি গান’ বাংলাদেশের লোকসংগীত তথা পল্লিগীতির একটি উল্লেখযোগ্য প্রকার। সাধারণ রাখাল, কৃষক বা মাঝি মাল্লাদের কণ্ঠে এই গানের সৃষ্টি ও প্রচার। বিশুদ্ধ ভাটিয়ালিতে কোন তাল বা ছন্দ ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সহজ সরল ভাষায় মনের আবেগ প্রকাশই এর আসল বৈশিষ্ট্য। এইসব গানে বাংলার নদীমাতৃক প্রকৃতির সঙ্গে দেহতত্ত্ব, গুরু সাধনার কথাও মিশে আছে। মুখে মুখে এই গানগুলি রচিত ও প্রচলিত হলেও কয়েকজন ভাটিয়ালি গান রচয়িতার নামও পাওয়া যায়।
বিষয়বস্তু
গহন নদীতে চলতে চলতে এক মাঝি আপন মনে গান গেয়ে চলেছে। সে আগে জানলে দরদী অর্থাৎ ঈশ্বরের ভাঙা নৌকায় চড়ত না। এমনকি সেই নৌকায় করে সে দূরের পথে পারি দিত না। এই নৌকায় সে নব লক্ষ টাকার ‘বেসাত’ তুলেছে; সে আগে জানলে এই ‘বেসাত’ সাজাত না।
মাঝির ময়ূরপঙ্খী নৌকায় যাওয়ার সুযোগ ছিল। সেই নৌকা ছিল বহু মূল্যের। কেননা নৌকায় ছিল সোনার দাঁড়, পবনের বৈঠা। নৌকার গলুই ভরে সে কত কিনা রাখতে পারত। অথচ এই নৌকায় তার কিছুই রাখার উপায় নেই। কেননা, সামান্য ঝড়েই নৌকা দুলতে থাকে। বাতাসের সঙ্গে জলের সংঘর্ষে যখন তুফান ওঠে তখন ভাঙা নৌকা নিয়ে পার হওয়া যায় না। এমনকি মাঝ দরিয়ায় জল যখন দ্বিগুণ বেগে বইতে থাকে তা দেখে মাঝির ভয় হয়।
এই মাঝির মনের মধ্যে এমন একজন অপূর্ব রমণীর ছবি আছে যাকে সে বলেছে ‘লবঙ্গ লতিকা’। এই লবঙ্গ লতিকার দেশে যাওয়ার জন্যে মাঝির মনে গোপন ইচ্ছা ছিল। তাই সেই দেশে যাওয়ার জন্যে সে নৌকায় উঠেছিল। কিন্তু তার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলি গিয়েছে। কেননা, নৌকা মাঝ দরিয়ায় নিমজ্জিত হয়েছে। মাঝির শরীরে ও মনে এখন আর বল নেই। তবু সোনার রঙের কন্যা তার স্মৃতিসত্তায় জাগরিত হয়ে তাকে যেন নিরন্তর ডেকে চলেছে। তাই সেই ‘সোনার বরণা’র জন্যে মাঝির মন কেমন যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে।
সঠিক অর্থ অভিধান
দরদী-মরমি, সমব্যাথী, বেসাত-পণ্যদ্রব্য, পবন-বাতাস, ময়ূরপঙ্খী-ময়ূরের আকৃতি বিশিষ্ট। নাও- নৌকা। সুরজ-সূর্য। গলুই-নৌকার সামনের বা পিছনের সরু অংশ। জোছনা-জ্যোৎস্না, চাঁদের আলো। তুফান-প্রবল ঝড়। গাঙ-গঙ্গা, এখানে নদী। দইরা-সমুদ্র, দরিয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণ। বিজলি-বিদ্যুৎ।
শূন্যস্থান পূরণ করো:
১. ছিলো- দাড় বৈঠা।
—নাওখানা।
চন্দ্র সুরজ–- ভরি।
ফুল ছড়াতে–।
সং ব যো জি ত প্র শ্ন
একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১.১ ‘ভাটিয়ালি’ কী ধরনের গান?
১.২ ‘ভাটিয়ালি গান’ কোন জেলায় বিশেষভাবে প্রচলিত রয়েছে?
১.৩ ভাটিয়ালি গানে কোনো তাল থাকে কি?
১.৪ ভাটিয়ালি গানে কোনো ছন্দ থাকে কি?
১.৫ ভাটিয়ালি গান কাদের মুখে শোনা যায়?
১.৬ কয়েকজন ভাটিয়ালি গায়কের নাম করো।
১.৭ ভাটিয়ালি গানের একজন উল্লেখযোগ্য শিল্পীর নাম করো
১.৮ ‘মাঝ দরিয়া’ কথার অর্থ কী?
১.৯ ‘দূরের পাড়ি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
১.১০ ‘নবলাখ’ কথার অর্থ কী?
১.১১ ‘দইরা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
১.১২ ‘লবঙ্গ লতিকার দেশে’- এখানে ‘লবঙ্গ লতিকার দেশে’ বলতে কী বোঝনো হয়েছে?
১.১৩ ভাটিয়ালি গান ছাড়া আরও কয়েকটি লোকসংগীতের নাম করো।
১.১৪ ময়ূরপঙ্খী নৌকাটি কেমন?
১.১৫ “কেউ গাঙ পাড়ি দিও না।”- এই নিষেধের কারণ কী?
১.১৬ “ওরে বিষম দইরার পানি”- কখন ‘দইরার পানি’ ‘বিষম’ হয়ে ওঠে?***
১.১৭ “ভয়েতে প্রাণ বাঁচে না।”-এ ভয়ের কারণ কী?
১.১৮ “যাবার ছিলো বাসনা”-কোথায় যাবার বাসনা ছিল।
১.১৯ “তুই কেন হলি আজ বিমনা”-কে বিমনা হয়েছিল।
১.২০ “নাই বল তবু বল”- দু’বার ‘বল’ কথাটি প্রয়োগের কার কী?
১.২১ “ও আমার দরদী”-নামাঙ্কিত গানে ব্যবহৃত হয়েছে এম
কয়েকটি ধ্বন্যাত্মক শব্দের নাম লেখো।***
১.২২ নৌকার গলুই ভরিয়ে রাখত কারা?
১.২৩ “উপায় কী তার বলো না।”- বক্তা কীসের উপায় খুঁজেছেন।
১.২৪ “ও তোর সামনে নাচে”-কার সামনে কে নাচে?
১.২৫ “আগে জানলে”- কবি কী করতেন না বলে জানিয়েছেন?
সংক্ষেপে লেখো:
২.১ “ও আমার দরদী আগে জানলে”-বক্তার এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী?***
২.২ “কেউ গাঙ পাড়ি দিও না”-এই সতর্কবাণীর কারণ কী?***
২.৩ “ভয়েতে প্রাণ বাঁচে না।”-ভয়ের কারণ কী?
২.৪ “তুই কেন হলি আজ বিমনা”- ‘বিমনা’ হওয়ার কারণ কী?***
২.৫ ভাটিয়ালি গানের বৈশিষ্ট্য লেখো।***
১. বিপরীত শব্দ লিখে বাক্য রচনা করো :
আগে, ভাঙ্গা, দূরের, ভয়, দরদী, উপায়, বোঝাই, বাঁচে,
দেশে।
২. সমার্থক শব্দ লেখো:
বাণিজ্য, গান, নাও, চন্দ্র, সূরয, পানি, বাসনা, বিমনা, বল, বিজলি, সোনা, পবন, ফুল, গাঙ।
৩. কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো :
৩.১ ও আমার দরদী।
৩.২ তোর ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না।
৩.৩ ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না।
৩.৪ ফুল ছড়াতে জোছনা।
৩.৫ ভয়েতে প্রাণ বাঁচে না।
৩.৬ মাঝ দরিয়ায় নাও ডুবিল।
৩.৭ যাবার হলো বাসনা।
৩.৮ কেউ গাঙ পাড়ি দিও না।
৩.৯ কন্যা সোনার বরণা।
৩.১০ তোর সামনে নাচে।