Class 7 Sahityamela
চিন্তাশীল
অধ্যায় ৩৪
চিন্তাশীল
পাট্যকার পরিচিতি
‘ভারততীর্থ’ কবিতার লেখক পরিচিতি দেখো।
বিষয় সংক্ষেপ
দুটি দৃশ্যে সমাপ্ত ‘চিন্তাশীল’ নামাঙ্কিত নাটকের মূল চরিত্র হল নরহরি। নাটকের প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় নরহরি অত্যন্ত চিন্তিত। ভাত শুকিয়ে যাচ্ছে। তার মা মাছি তাড়াচ্ছেন। কথাপ্রসঙ্গে নরহরির মা জানিয়েছেন, ‘অত ভেবো না, মাথার ব্যামো হবে বাছা।’ বাছা শব্দটি শুনে নরহরির চিন্তা আরও বাড়তে থাকে কেননা, তার তৎক্ষণাৎ মনে হয়, ২০০০ বছর আগে মানুষ ‘বৎস্য’ বলে সম্বোধন করত, এখন ‘বাছা’ শব্দটি কীভাবেই বা সম্বোধনের জায়গায় এল।
নরহরির মা পুনরায় চিন্তিত নরহরিকে দেখে আবার বললেন, ‘ভাবনা তো তোর চিরকাল থাকবে, ভাত যে শুকোয়। লক্ষ্মী আমার, একবার ওঠ।’ মায়ের মুখে ‘লক্ষ্মী’ শব্দের প্রয়োগ শুনে পুনরায় নরহরির চিন্তা শুরু হয়। কেননা, লক্ষ্মী শব্দের মাধ্যমে পূর্বে ধনসম্পদের দেবীকে বোঝানো হতো। কালক্রমে অত্যন্ত গুণবতী, সুশীলা গৃহিণীকে ‘লক্ষ্মী’ বলে সম্বোধন করা হতো। এখন সেই শব্দটি কী করেই বা একটি ছেলের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা ভেবে নরহরির চিন্তার শেষ থাকে না।
নরহরির মা তার বোনকে পাঠিয়ে দিলে তিনি নরহরিকে বলেন, ‘সুবলের মা তোকে দেখে হেসেই কুরুক্ষেত্র।’ এই কথাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে নরহরি পুনরায় ভাবতে শুরু করে। কেননা, হঠাৎ করে ‘কুরুক্ষেত্র’ প্রসঙ্গটি কীভাবেই বা হাজির হল। ‘কুরুক্ষেত্র’ মানে আর্য গৌরব, যুদ্ধ, কান্না, বিষাদের নানা চালচিত্র। হাসির সঙ্গে ‘কুরুক্ষেত্র’-এর সম্পর্ক কী তা ভেবেই পায় না নরহরি।
নরহরির দিদিমা নরহরিকে জানান, ‘ও নরু, সূর্য যে অস্ত যায়।’ নরহরি ঠাকুমার কথা শুনে তো অবাক যেন সূর্য কখনও অস্ত যায় না। এই বলে সে ঠাকুমাকে বোঝাতে শুরু করে। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছেন, কোনো কিছুতেই নরহরির শান্তি নেই। নরহরির মা শিশু ভাগনেয়কে নিয়ে উপস্থিত হন নরহরির সামনে এবং শিশুটিকে জানান, ‘তোমার মামাকে দণ্ডবৎ করো।’ একথা শুনে সে তার মাকে জানিয়েছে, ‘ওকে ভুল শিখিও না।’ কেননা, ‘দণ্ডবৎ করো’ এটি ব্যাকরণগতভাবে অশুদ্ধ। এটি হওয়া উচিত ‘দণ্ডবৎ হওয়া’। নরহরি মনে করে শিশুদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমনভাবে তাদের ভাষা শেখাতে হবে যাতে পরবর্তীকালে তারা সঠিকভাবে প্রত্যেকটি বিষয় প্রকাশ করতে পারে।
অতঃপর অত্যন্ত চিন্তিত নরহরি তার ভাগনেকে নিজের নামের সমাস জিজ্ঞাসা করে। ছেলের এই জটিল মানসিকতার কথা চিন্তা করে তার মা জানান, ‘আমায় কাশী পাঠিয়ে দে, আমি কাশীবাসী হব।’ মায়ের কথা শুনে নরহরির চিন্তার শেষ থাকে না। কেননা, তাকে মাসে মাসে কিছু টাকার তো বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। সেই টাকাটাই বা সে কোথায় পাবে।
ছেলের কথা শুনে মা জানান, ‘তোমার আর ভাবতে হবে না আজ কাশী গিয়ে কাজ নেই।’ একটি ছেলে সবসময় সামান্য তুচ্ছ বিষ্ণু নিয়েও ভাবতে থাকলে পরিবারের প্রত্যেকের মধ্যে যে মানসিক সান্ধ্য দেখা যায় তাকে অসাধারণ হাস্যরসের মোড়কে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনায় ঠাকুর।
সঠিক অর্থঅভিধাস
ব্যামো-অসুখ। নিমগ্ন-ডুব দেওয়া বা নিমজ্জিত। ধাতু-ক্রিয়াবাচর প্রকৃতি বা শব্দমূল (এখানে)। কুরুক্ষেত্র কুরু ও পাণ্ডবের যুদ্ধাক্ষেত্র। রোমাঞ্চিত-শিহরিত/রোমাঞ্চিত। অন্তঃকরণ-হৃদয় বা মন। বন্ধ-বাঁয়। দণ্ডবৎ-প্রণাম। আমোদ-আহ্লাদ/আনন্দ। নিতান্ত খুব। বন্দোবস্ত-ব্যবস্থা। রোসো-অপেক্ষা কর। চিন্তাশীল-ভাবুক।
১. একই অর্থ যুক্ত শব্দ নাটক থেকে খুঁজে বের করে লেখো।
২. শূন্যস্থান পূরণ করো:
৩. নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
৩.১ “কথাটা’ বড়ো সামান্য নয়”-বক্তা কে? কার কোন্ কথাটা সামান্য নয়?
৩.২ “এই সব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো?”-কে কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ ভাবনাকে বাজে বলা হয়েছে? তা কি সত্যিই ‘বাজে ভাবনা’-তোমার কি মনে হয়?
৩.৩ “আমাদের কথা শুনলেই এর শোক উপস্থিত হয়”- বজ্রা কে? তার কোন্ কথায় নরহরি শোকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে!
৩.৪ “রোসো, আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিচ্ছি’- নরহরি কার কাছে কী প্রমাণ করে দিতে চেয়েছিল ?***
৩.৫ “আদর করবি, তাতেও ভাবতে হবে নরু?”-এর প্রত্যুত্তরে নরু মাকে কী কী বলেছে?
৩.৬ “তোমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি বাধা দেব না।”-কে, কাকে বাধা দিতে চায়নি?
৩.৭ “এটাতে বড়ো বেশি ভাবতে হল না’- কার স্বগতোক্তি? কাকে বেশি ভাবতে হল না? কেন?***
৪. “চিন্তাশীল নরহরি সবার সব কথাতেই চিন্তামগ্ন হয়ে পড়ে, অথচ মায়ের কাশীবাসী হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে শুনে তখনই সে রাজি যায়। তার করতে হহেয়ে যায়। কিন্তু তার মা যেই টাকার বান্নোহার চরিত্রটি সম্পর্কে তোমার কেমন ধারণা হল?
৫. ঠিক বানানটি বেছে লেখো:
ব্যমো/ব্যামো, পরিবর্তন/পরিবর্তণ, ব্যাস্ত/ব্যস্ত,
লক্ষ্মী/লক্ষী, প্রমাণ/প্রমান, মুখস্থ/মুখস্ত।
৬.১ ভাত শুকাইতেছে, মা মাছি তাড়াইতেছেন।
৬.২ এ কথা নিতান্ত সহজ নয়।
৬.৩ নরহরির শিশু ভাগিনেয়কে কোলে করিয়া মাতার প্রবেশ। উত্তর: নরহরির শিশু ভাগনেকে কোলে করে মার প্রবেশ।
৬.৪ নরহরির মাথায় হাত দিয়া পুনশ্চ চিন্তায় মগ্ন।
৭. অর্থ লেখো:
বৎস, রোসো,দণ্ডবৎ,
৮. সমার্থক শব্দ লেখো:
পৃথিবী, সূর্য,স্ত্রীলোক, মা,
৯. নাটক থেকে পাঁচটি নির্দেশক ও অনির্দেশক শব্দ খুঁজেনিয়ে লেখো।
১০. “হেসেই কুরুক্ষেত্র”-শব্দবন্ধের মূল ভাবটি কী?
১০.১ ‘বাছা’ শব্দটি কোন ধাতু নিষ্পন্ন শব্দ?
১০.২ ‘বাছা’ শব্দের দুটি প্রতিশব্দ লেখো।
১১. ‘দাড়ি’ শব্দের সাধুরূপটি লেখো।
১২. ‘হেসেই কুরুক্ষেত্র’-শব্দবন্ধের মূলভাবটি কী?
১৩. ‘গুরু’ শব্দটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা
করো।
১৪. ‘সূর্য তো অস্ত যায় না’-এখানে কোন বৈজ্ঞানিক সত্যের
আভাস দেওয়া হয়েছে?
১৫. ‘মাথা’ শব্দটি কোন্ তৎসম শব্দ থেকে এসেছে?
১৬. “ভাত জুড়িয়ে গেল”-এখানে কথাটির অর্থ ভাত ঠান্ডা হয়ে গেল। শুকিয়ে গেল। ‘জুড়িয়ে গেল’ শব্দকে অন্য অর্থে প্রয়োগ করে একটি বাক্য লেখো।
১৭. “মাছি ভনভন করছে’- ভনভন-এর মতো আরও পাঁচটি ধ্বন্যাত্মক/অনুকার শব্দদ্বৈত তৈরি করো।
১৮. কাশী কোন্ রাজ্যে অবস্থিত? ‘কাশী’র প্রসিদ্ধির কারণ কী?
১৯. নাটকটিতে মোট কটি ‘দৃশ্য’ রয়েছে? কোন্ কোন্ দৃশ্যে কাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়?
২০. গুরুতর-এ রকম শব্দের পর ‘তর’ যোগ করে পাঁচটি নতুন শব্দ লেখো।
২১. সন্ধি বিচ্ছেদ করো:
২২. উচ্চারণে বিকৃত শব্দগুলির পাশাপাশি মূল শব্দগুলি লেখো।
২৩. নরহরির ভাগনের ডাক নামটি কী তা পাঠ থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো।
২৪. শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য লেখো
পুরুষ
সকল-
শকল-
পারা-
পাড়া
ভাষা-
ভাসা-
২৫. ‘মাথা’ শব্দটিকে পাঁচটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে বাক্য রচনা করো।
উত্তর:
মূল শব্দ— —শব্দটির অর্থ— –বাক্য রচনা
মাথা—-
মাথা—-
মাথা—
মাথা—
মাথা—-
দু-একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১. “কথাটা বড়ো সামান্য নয়।”- কোন্ কথার প্রসঙ্গে এই উক্তিটি এসেছে?
২. “ভাবনা তো চিরকাল থাকবে”-কে, কাকে একথা বলেছেন?
৩. “একবার ভেবে দেখো মা”- বক্তা কী ভেবে দেখতে বলেছেন?
৪. “ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে।”-বক্তা কে? কী ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে বলে বক্তা মনে করে?***
৫. ‘কুরুক্ষেত্র’কে নরহরি কী বলে চিহ্নিত করেছে?
৬. “মনে পড়লে কি শরীর রোমাঞ্চিত হয় না।”- কে, কেন এই উক্তিটি করেছে?
৭ “আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি।”- বক্তা কে? সে কী বুঝিয়ে দিয়েছে?
৮. “এটা যে তুমি উলটো কথা বললে!”-বক্তা কে? কোন্ কথাকে উলটো কথা বলা হয়েছে?
৯. নরহরির শিশু ভাগনের নাম কী ছিল?
১০. “ওকে ভুল শিখিও না।”- কে, কাকে একথা বলেছে?
ভুল বিষয়টি কী?
২৬. নাটকটির নামকরণ তোমার যথাযথ মনে হয়েছে কি-না তা যুক্তিসহ আলোচনা করো।
২৭. মূল শব্দ— আদি অর্থ— প্রচলিত অর্থ
লক্ষ্মী—দেবী বিশেষ—সুশীলা স্ত্রীলোক
অন্ন— প্রধান ভোজ্যদ্রব্য—ভাত
ব্যাকরণের সহজপাঠ
১. সমার্থক শব্দ লেখো:
বৎস, সামান্য, শরীর, ভাত, প্রয়োগ, পাগল, উপস্থিত।
উত্তর:
২. বিপরীত শব্দ লিখে বাক্য রচনা করো:
সামান্য, ইচ্ছে, বৃহৎ, আরম্ভ, শিক্ষা, শোক, লক্ষ্মী।
৩. স্থূলাক্ষর পদগুলির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো:
৩.১ ও নরু, সূর্য যে অস্ত যায়!
৩.২ লক্ষ্মী আমার, একবার ওঠ।
৩.৩. ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে।
৩.৪ শরীর রোমাঞ্চিত হয় না!
৩.৫ তুই পাগল হলি?
৩.৬ ওকে ভুল শিখিয়ো না।
৩.৭ আমি কাশীবাসী হব।
৩.৮ তোমার মামাকে দণ্ডবৎ করো।
৩.৯ মাছি ভন ভন করছে।
৩.১০ কাজ নেই বাপু।
৪. পদ পরিবর্তন করো:
পৃথিবী, শব্দ, পাগল, কাজ, শরীর, ব্যাকরণ, প্রমাণ।