Chapter 8
Class 7 Sahityamela
ভারততীৰ্থ
অধ্যায় ২৬
ভারততীর্থ
কবি পরিচিতি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (বাংলা ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাতা সারদা দেবী। প্রথাবদ্ধ শিক্ষাপদ্ধতিতে বালক রবীন্দ্রনাথের বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। তাই বারবার বিদ্যালয় পরিবর্তন করেন এবং শেষপর্যন্ত বাড়িতে গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নানা বিষয়ে শিক্ষালাভ করেন। ঠাকুর পরিবারের সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠায় পুথিগত জ্ঞানের বাইরে সাহিত্য, শিল্প ও সংগীতচর্চায় তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের সমস্ত শাখাতেই তিনি তাঁর প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন। ‘কথা ও কাহিনী’, ‘সহজপাঠ’, ‘ছেলেবেলা’, ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’, ‘চিরকুমার সভা’, ‘হাস্যকৌতুক’, ‘ব্যঙ্গকৌতুক’, ‘ডাকঘর’, ‘গল্পগুচ্ছ’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। ১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ ‘Song offerings’-এর জন্য প্রথম এশিয়াবাসী হিসেবে তিনি নোবেল পান।
বিষয়বস্তু
‘ভারততীর্থ’ কবিতাটি কবির ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এই কবিতায় কবি ভারতবর্ষকে সর্বধর্ম সমন্বয়ের মহামিলনক্ষেত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন। বিশাল এই দেশ ভারতবর্ষে নানা জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বসবাস করে। কবি অতুলপ্রসাদ সেনের ভাষায় ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।’ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারতবর্ষের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। যুগে যুগে, কালে কালে বিদেশিরা বারবার ভারতবর্ষে এসেছে। কখনও এদেশে সাম্রাজ্য স্থাপনের বাসনায়,আবার কখনও ভারতের ঐশ্বর্য-সম্পদ লুঠ করার প্রত্যাশায়। আর্য-অনার্য, শক-হুন-পাঠান- মোগল-ইংরেজ প্রভৃতি জাতি ভারতবর্ষে এসেছে এবং ভারতীয় সভ্যতার সঙ্গে তারা একাত্ম হয়ে গেছে। বর্তমানে কবি সমস্ত জাতিধর্মের উচ্চ-নীচ, ব্রাহ্মণ-পতিত সবাইকে এদেশে আসার আকুল আহ্বান জানিয়েছেন। জীবনের যাবতীয় সংকীর্ণতাকে পিছনে ফেলে ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ চেতনার জাগরণের মাধ্যমেই ভারতমাতার উদার অভিষেক ঘটবে বলে কবি আশা করেছেন।
সঠিক অর্থ অভিধান
মোর-আমার। চিত্ত-মন। পুণ্য-পবিত্র। তীর্থে-পুণ্যস্থানে। ধীরে-আস্তে। মহামানবের-মহান ব্যক্তিদের। হেথায়-এখানে। বাহু-হাত। বাড়ায়ে বাড়িয়ে দিয়ে। নমি-নমস্কার করি। নরদেবতারে-নররূপী দেবতাকে। উদার-মহৎ। ছন্দ-তাল-লয়। পরমানন্দে-মনের আনন্দে। বন্দন-বন্দনা। ধ্যানগম্ভীর-ধ্যানে নিমগ্ন। ভূধর-পর্বত। যপমালা-ইষ্ট মন্ত্র যপ করার মালা। ধৃত-ধারণ করা হয়েছে এমন। প্রান্তর-বিস্তৃত মাঠ। নিত্য-প্রতিদিন বা সর্বদা। হেরো-দেখো। পবিত্র-বিশুদ্ধ। ধরিত্রীরে পৃথিবীকে। কেহ-কেউ। নাহি-নেই। আহ্বানে-ডাকে। ধারা-প্রবাহ। দুর্বার-অপ্রতিরোধ্য। আর্য-মধ্য এশিয়া থেকে আগত মার্জিত সংস্কৃতির মানুষ। অনার্য-এদেশের আদি-মানুষ। দ্রাবিড়-প্রাচীন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের কৃষ্ণবর্ণের মানুষজন। শক-মধ্য এশিয়ার প্রাচীন জাতিবিশেষ। হন-ভারতবর্ষের উত্তরে ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন বিশেষ যোদ্ধাজাতি। পাঠান-আফগানিস্তানের মুসলমান জাতিবিশেষ। মোগল-বাবরের নেতৃত্বে ভারতবর্ষের সাম্রাজ্য বিস্তার করা মুসলমানরা। লীন-মিশে যাওয়া। পশ্চিমে-দিক বিশেষ; এখানে অবশ্য পাশ্চাত্য সভ্যতাকে বোঝানো হয়েছে। আজি-আজকে। দ্বার-দরজা। সেথা-সেখানে। রণধারা-যুদ্ধের প্রবাহ। বাহি-বহন করে। কলরবে-কোলাহলে। ভেদি-ভেদ করে। মরুপথ-মরুভূমির পথ। গিরি-হিমালয়। সবে-সবাই। বিরাজে-অবস্থান করে। শোণিতে-রক্তে। বিচিত্র-নানারকম। রুদ্রবীণা-বীণা জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বিশেষ। রুদ্র-শিবের প্রলয়রূপ। নাশিবে-নাশ করবে। বিরাম-বিশ্রাম। বিহীন-ছাড়া। মহা-মহৎ। ওংকারধ্বনি-ধ্যানমন্ত্র, আদি ব্রহ্মমন্ত্র। হৃদয়তন্ত্রে মনের তারে। রণরনি- রণিত হওয়া। তপস্যা- যোগসাধনা। বলে-শক্তিতে। অনলে আগুনে। বহুরে-বহুজনকে। আহুতি-আত্মদান, হোমের সামগ্রী, অর্পণ করা। বিভেদ-পার্থক্য। হিয়া-হৃদয়। যজ্ঞশালা-যে স্থানে যজ্ঞ হয়। যজ্ঞ-দেবতার উদ্দেশ্যে পূজা-পার্বণ অনুষ্ঠানাদি। আনত-ঈষৎ নত। শিরে-মাথায়। হোমানলে-হোমের আগুনে। দোহিত-দহন করতে। বহন-বয়ে চলা। লাজ-লজ্জা। দুঃসহ-অসহ্য। অবসান-শেষ। লভিবে-লাভ করবে। বিশাল-বিরাট। পোহায়-নিশি অবসান হয়। রজনি-রাত্রি। নীড়ে-বাসায়। খ্রিস্টান-জিশু খ্রিস্টের অনুগামী ধার্মিক। শুচি-শুদ্ধ। পতিত-অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্য। অপনিত-অপসারিত। অভিষেক-বরণ করা। ত্বরা-দ্রুত। মঙ্গলঘট-মঙ্গল কামনায় প্রতিষ্ঠিত মাঙ্গলিক ঘট। পরশে-স্পর্শে।
নির্দেশ অনুসারে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
১. কবিতায় ভারতভূমিকে ‘পুণ্যতীর্থ’ বলা হয়েছে কেন?* উত্তর: তীর্থক্ষেত্রে পুণ্যলাভের আশায় যেমন বহু মানুষের সমাবেশ