Chapter 1
Class 7 Sahityamela
ছন্দে শুধু কান রাখো
Class 7 বাংলা
১ নং অধ্য়য়
ছন্দে শুধু কান রাখো
কবি পরিচিতি
বিশ শতকের ত্রিশ-চল্লিশের দশকের আধুনিক বাংলা কবিতার বিশিষ্ট কবি অজিত দত্ত ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকার বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। বন্ধু বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে তরুণ বয়সেই ‘প্রগতি’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক অজিত দত্ত ‘কবিতা’ পত্রিকার সূচনা থেকেই ছিলেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-১. ‘নষ্টচাঁদ’, ২. ‘কুসুমের মাস’, ৩. ‘পাতালকন্যা’, ৪. ‘ছায়ার আলপনা’, ৫. ‘ছড়ার বই’ প্রভৃতি।
কবির বৈশিষ্ট্য
১. অজিত দত্ত প্রেমের কবি। রোমান্টিকতা তাঁর কবিধর্মের বৈশিষ্ট্য।
২. অজিত দত্তের কবিতায় সৌন্দর্য-বিলাস ও আবেগধর্মীতা লক্ষণীয়।
৩. কবিতার আঙ্গিকে পয়ার ছন্দের সাবলীল প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
কবিতার বিষয়বস্তু
ছন্দের মধ্যেই রয়েছে জীবনের স্বাভাবিক চলমানতা। শুধু কবিতার মধ্যে ছন্দ আছে, তা নয়; সমগ্র পৃথিবীর চলনের মধ্যে ছন্দের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। চারপাশের ঘটনার মধ্যে অপূর্ব এক ছন্দের দোলা রয়েছে। এই স্বাভাবিক ছন্দের দোলায়িত চালে সমগ্র জগৎ চলতে থাকে।
কবি মন্দ কথায় কান না দিয়ে শুধু ছন্দে কান পাততে বলেছেন। জীবনের সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করলে তবেই ছন্দের মিষ্টি-মধুর স্পন্দন অনুভব করা যায়। ঝড়-বাদল, জ্যোৎস্না, পাখির ডাক, ঝিঁঝির ডাক, নদীর স্রোত-সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে অপূর্ব এক ছন্দের অনুভূতি। নদীর স্রোত অবিরাম বয়ে চলে। সেই চলমান স্রোতের মধ্যেও রয়েছে সহজ ছন্দের এক দোলা।
মোটরগাড়ির চাকা ঘোরার শব্দের মধ্যেও তো ছন্দের ধ্বনি উচ্চারিত হয়। নৌকা ও জাহাজ যখন চলে, তখন জলের স্রোতের মধ্যে যে ঢেউ সৃষ্টি হয়, তার মধ্যেও রয়েছে অপূর্ব ছন্দ। ঘড়ির কাঁটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ছন্দ মিলিয়ে চলে। দিনের পরে রাত, একইভাবে পুনরায় দিন-সেও তো ছন্দের খেলা।
সুতরাং, জগতের সর্বত্র রয়েছে ছন্দের অপূর্ব এক দোলায়িত রূপ ।
• সঠিক অর্থ অভিধান
মন্দ-খারাপ। দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঝগড়া, বিবাদ, কলহ। ভুবন-পৃথিবী, জগৎ, বিশ্ব, অবনী। সঙ্কেত-ইশারা, ইঙ্গিত। ঘোর রাতে গভীর রাতে। মন- হৃদয়, চিত্ত। কিচ্ছুটি- কোনো কিছু। মজা- আনন্দ। পদ্য-কবিতা।
হাতেকলমে
১. অনধিক দুটি বাক্যে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
প্রশ্ন: ‘মন্দ কথায় কান দিয়ো না’-মন্দ, কথার প্রতি কবির কীরূপ মনোভাব কবিতায় ব্যক্ত হয়েছে?
উত্তর:
প্রশ্ন: ‘কেউ লেখেনি আর কোথাও’- কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর:
প্রশ্ন: ‘চিনবে এরা ভুবনটাকে’- তারা কীভাবে ভুবনটাকে চিনবে?
উত্তর:
প্রশ্ন: ‘পদ্য লেখা সহজ নয়’-পদ্য লেখা কখন সহজ হবে বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: ।
প্রশ্ন: ‘ছন্দ শোনা যায় নাকো’- কখন কবির ভাবনায় আর ছন্দ শোনা যায় না?
উত্তর:
২. বিশেষ্যগুলিকে বিশেষণে ও বিশেষণগুলিকে বিশেষ্যে পরিবর্তন করো এবং বাক্য রচনা করো।
- ঝড় (বি)-ঝোড়ো (বিণ) আজ সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইছে।
- মন (বি)-মানসিক (বিণ): আজ কমলবাবুর মানসিক অবস্থা ভালো নেই।
- ছন্দ (বি)-ছান্দসিক (বিণ): সাহিত্যিক মহলে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছান্দসিক হিসেবে প্রসিদ্ধ।
- দিন (বি)-দৈনিক (বিণ): ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক রুটিন অনুসারে পড়াশোনা করা উচিত।
- সুর (বি)-সুরেলা (বিণ): শিপ্রার সুরেলা গলার গানে আমরা অবাক হয়ে গেলাম।
- সংকেত (বি)-সাংকেতিক (বিণ) সাংকেতিক চিহ্ন অনুসরণ করে আমরা অবশেষে গন্তব্যস্থলে পৌঁছালাম।
- দ্বন্দু (বি) দ্বান্দ্বিক (বিণ) অবশেষে সেই দ্বান্দ্বিক মনোভাবের সমাধান হল।
- মন্দ (বিণ)-মন্দত্ব (বি) ক্রমেই মন্দত্ব অনুভব করা গেল।
- ছন্দহীন (বিণ)- ছন্দহীনতা (বি)
ছন্দহীনতা কবিতার ক্ষেত্রে একটি অন্যতম ত্রুটি।
- পদ্যময় (বিণ)-পদ্য (বি): পদ্য লিখতে গেলে অবশ্যই ছন্দজ্ঞান
থাকা দরকার।
• সহজ (বিণ)-সহজতা (বি): পদ্য রচনায় ভাষার সহজতা একটি বড়ো গুণ।
৩. নীচের শব্দগুলিকে আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার করে দুটি করে বাক্য লেখো।
- মন্দ : মন্দ কথায় কান দিলে ছন্দ শোনা যায় না। (খারাপ) মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। (ধীর)
- দ্বন্দু : দ্বন্দু মানুষের সংযমে ব্যাঘাত ঘটায়। (ঝগড়া) দ্বন্দু ছাড়া জয়ী হওয়া যায় না। (প্রতিযোগিতা)
◇ তাল: স্বর ও তাল ঠিক থাকলে তবেই গান শুনতে ভালো লাগে। (ছন্দ)
তাল নবমী বাঙালির একটি অন্যতম উৎসব। (উৎসব)
• ডাক: কোকিলের ডাক খুব সুন্দর। (স্বর)
ডাকের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। (ডাকঘর)
- বাজে : ঘড়িতে এখন দুপুর বারোটা বাজে। (সময়) লেবুটা খেতে বড্ড বাজে। (স্বাদ)
C
- ছড়া : এক ছড়া কলার দাম কত? (একগুচ্ছ) ছড়া শুনতে আমার খুব ভালো লাগে। (কবিতা)
• মজা : অন্যকে নিয়ে মজা করা ঠিক নয়। (তাচ্ছিল্য) দুর্গা পুজোতে আমি খুব মজা করেছি। (আনন্দ)
- নয় :নয় দিন ধরে পরীক্ষা চলছে। (সংখ্যা) মিথ্যা কথা বলা উচিত নয়। (নিষেধ)
৪. নীচের শব্দগুলি কোন মূল শব্দ থেকে এসেছে লেখো। জ্যোছনা-জ্যোৎস্না। চাকা চক্র। কান কর্ণ। দুপুর- দ্বিপ্রহর। ঝিঁঝি-ঝিল্লি।
৫.কবিতার ভাষা থেকে মৌখিক ভাষায় রূপান্তরিত করো।
৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তর:
৫.২ ছন্দে বাঁধা রাত্রি-দিন।
উত্তর:
৫.৩ কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন।
উত্তর:
৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে ছন্দ সুরের সংকেতে।
উত্তর:
৫.৫ কান না দিলে ছন্দে জেনো/পদ্য লেখা সহজ নয়।
উত্তর:
৬. ‘কান’ শব্দটিকে পাঁচটি বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে বাক্য লেখো।
- কান : কান কাটা লোকেদের লজ্জা থাকে না। (নির্লজ্জ)
- কান : কান টানলে মাথা আসে। (গৌণ)
- কান : চোখ-কান খোলা রেখে রাস্তায় চলা উচিত। (সতর্ক)
- কান : সুব্রত বাড়ির কোনো কিছুতেই কান দেয় না। (দৃষ্টি)
- কান : কানের সাহায্যে আমরা শুনতে পাই। (অঙ্গ)
৭. ‘ঝড়-বাদল’-এমনই সমার্থক বা প্রায় সমার্থক দিয়ে পাঁচটি
শব্দ লেখো।
উত্তর:
৮. তোমার পরিচিত আর কোন্ কোন্ যানবাহনের চলার মধ্যে
নির্দিষ্ট ছন্দ রয়েছে?
উত্তর:
৯. নানা প্রাকৃতিক ঘটনায় কীভাবে প্রকৃতির ছন্দ ধরা পড়ে?
:ক. কান পেতে শোনা যাবে এমন ছন্দ-
উত্তর
খ. মন পেতে শোনা যাবে এমন ছন্দ–
১. গাছের পাতা ঝরে পড়া।
২. দুপুর রোদের চিত্র।
৩. সন্ধ্যা নেমে আসার পূর্ব অবস্থা।
৪. গভীর রাতের নিস্তব্ধতা।
৫. নদীর স্রোতের চলমানতা।
৬. জ্যোৎস্না রাতের নৈঃশব্দিক অবস্থা।
১০. সমার্থক শব্দ লেখো।
জল-বারি, নীর, সলিল, অম্বু, উদক।
দিন-দিবা, দিবস, অহ্ন, দিনমান।
রাত্রি-রাত, নিশীথ, রজনী, যামিনী, শর্বরী, বিভাবরী। নদী-তটিনী, কল্লোলিনী, প্রবাহিনী, সরিৎ, তরঙ্গিনী।
ভুবন-জগৎ, পৃথিবী, বিশ্ব, অবনী, ধরিত্রী।
১১. শব্দযুগলের অর্থপার্থক্য দেখাও। দিন-দীন, মন-মণ, সুর-শূর, সকল-শকল।
উত্তর:
১২. ‘যারা-তারা’র মতো তিনটি সাপেক্ষ শব্দজোড় তৈরি করো।
উত্তর:
১৩. কবিতা থেকে খুঁজে নিয়ে তিনটি সর্বনাম লেখো।
উত্তর:
১৪. কবিতায় রয়েছে এমন চারটি ‘সম্বন্ধ পদ’ ‘উল্লেখ করো।
উত্তর:
১৫. নীচের বাক্যাংশের উদ্দেশ্য ও বিধেয় অংশ আলাদাভাবে
দেখাও।
১৫.১ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে।
উত্তর:
১৫.২ দেখবে তখন তেমন ছড়া/কেউ লেখেনি আর কোথাও।
উত্তর:
১৫.৩ জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/নৌকো জাহাজ দেয় পাড়ি। উত্তর: উদ্দেশ্য-নৌকা জাহাজ
বিধেয়-জলের ছন্দে তাল মিলিয়ে/দেয় পাড়ি।
১৫.৪ চিনবে তারা ভুবনটাকে/ছন্দ সুরের সংকেতে।
উত্তর:
১৬. নিম্নরেখ অংশগুলির কারকবিভক্তি নির্দেশ করো।
১৬.১ ছন্দে শুধু কান রাখো।
উত্তর:
১৬.২ ছন্দ আছে ঝড়-বাদলে
উত্তর:
১৬.৩ দিন-দুপুরে পাখির ডাকে।
উত্তর:
১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি। ১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি।
উত্তর:
১৬.৪ ছন্দে চলে রেলগাড়ি। ১৬.৫ চিনবে তারা ভুবনটাকে।
উত্তর:
সংযোজিত প্রশ্ন
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।
১. কবি কেন বলেছেন পদ্য লেখা সহজ নয়?
উত্তর:
২. জীবন কীভাবে পদ্যময় হয়ে ওঠে বলে কবি মনে করেন?
উত্তর:
৩. ‘নয় ছন্দহীন’-কী ছন্দহীন নয়?
উত্তর:
৪. ‘চিনবে তারা ভুবনটাকে’- ‘ভুবন’ শব্দের অর্থ কী? ‘ভুবনটাকে’ কীভাবে চেনা সম্ভব?
উত্তর:
৫. ‘কিচ্ছুটি নয় ছন্দহীন’- কথাটির মধ্যে দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?***
উত্তর:
৬. ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’- এখানে ‘কান রাখো’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর:
৭. ‘মনের মাঝে জমবে মজা’- কীভাবে ‘মনের মাঝে’ ‘মজা’ জমবে
বলে কবি মনে করেন?**
উত্তর:
৮. ‘দ্বন্দ্ব ভুলে মন না দিলে/ছন্দ শোনা যায় নাকো।’ কবির একথা বলার কারণ কী?***
উত্তর:
৯. ‘ছন্দে শুধু কান রাখো’ কবিতায় কবি ছন্দ বলতে কীসের কথা বুঝিয়েছেন?
উত্তর:
১০. প্রকৃতির মধ্যে কোথায় কোথায় ছন্দ আছে বলে কবি মনে করেন?
উত্তর:
১১. ছন্দে বাঁধা দিন-রাত্রি’-দিন-রাত কীভাবে ছন্দে বাঁধা থাকে? –
উত্তর:
১২. ‘কেউ লেখেনি আর কোথাও’- এখানে কোন্ বিষয়ের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর:
১৩. কবির কেন মনে হয়েছে সব সময় ছন্দ উপলব্ধি করা যায় না?
উত্তর:
১৪. ‘কান পেতে আর মন পেতে’-কবি কান পেতে ও মন পেতে
কী শুনতে বলেছেন?
উত্তর:
১৫. ‘জীবন হবে পদ্যময়’- কীভাবে জীবন পদ্যময় হবে?
উত্তর:
১. বিপরীত শব্দ লেখো:
মন্দ, দ্বন্দু, তাল, ছন্দহীন, পদ্য, সহজ, কিচ্ছুটি, মজা, সুর। উত্তর: মন্দ-ভালো, দ্বন্দু-নির্দ্বন্দু, তাল-বেতাল, ছন্দহীন- ছন্দময়, পদ্য-গদ্য, সহজ-কঠিন, কিচ্ছুটি-সবকিছু, মজা-নিরানন্দ, সুর-বেসুর।
২. বিশেষ্যের বিশেষণ নির্দেশ করো:
স্রোত, জল, রাত্রি, মজা, সহজ, ছন্দ।
উত্তর:
৩. পদান্তর করো:
মন, দ্বন্দু, ঝড়, সংকেত, সুর, দিন।
উত্তর:
৪. সমার্থক শব্দ লেখো:
পদ্য, সংকেত, স্রোত, মজা, সহজ, নৌকা, কান, মন, জীবন, জল।
উত্তর: