Class 7 Sahityamela
চিরদিনের
অধ্যায় ২১
চিরদিনের
• কবি পরিচয়
সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাধর ও জনপ্রিয় কবি। ‘কিশোর কবি’ নামে তিনি পরিচিত। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য। মাতা সুনীতি দেবী। বাংলা কবিতায় তিনি সাম্যবাদী চেতনার বিস্তার ঘটান। তাঁর কাব্যসাধনার মূল লক্ষ্য ছিল পৃথিবীর শোষিত মানুষের মুক্তি এবং শোষণহীন, অবিচারহীন নতুন সমাজ সৃষ্টি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ- ‘ছাড়পত্র’, ‘ঘুম নেই’, ‘পূর্বাভাস’, ‘মিঠে কড়া’, ‘হরতাল’, ‘গীতিগুচ্ছ’ ইত্যাদি। ‘চিরদিনের’ কবিতাটি তাঁর ‘ঘুম নেই’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে কবি সুকান্তের জীবনাবসান ঘটে।
• কবির বৈশিষ্ট্য
১. সুকান্ত প্রতিবাদের কবি।
২. বিশ্বযুদ্ধের অশনি-সংকেত তাঁর কবিতায় পাওয়া যায়।
৩. সরাসরি সময়ের কথা উঠে আসে কবিতায়।
৪. রূপকের আড়ালে সমাজের কথা বলেছেন।
৫. দুর্ভিক্ষের কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।
বিষয় পরিচিতি
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এ কবিতায় বাংলাদেশের গ্রাম্য প্রকৃতি ও মানুষের চিরন্তন অস্তিত্বের কথা সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। মেঠো আলপথ, তালসারি দিয়ে ঘেরা জোড়া দিঘি, মজা নদী, আর সবুজ গাছপালায় ঘেরা বাংলাদেশের গ্রামগুলি। এ ছবি কখনও পালটায় না। এখানে চাষি চাষ করে চিরকাল। দিন ফুরোলে গৃহবধূর শাঁখের শব্দে এখানে সন্ধ্যা নেমে আসে। ঘরে ঘরে দীপ জ্বলে।
কৃষক বধূরা ঢেঁকিতে ধান ভানে, ঠাকুমা তার নাতনিকে গল্প শোনায়। ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। আবার পাখির ডাকে জেগে উঠে সকাল বেলায় কামার, কুমোর, তাঁতি, কৃষক সবাই নিজের নিজের কাজ শুরু করে দেয়। দুর্ভিক্ষের দুঃসহ আঘাত থামাতে পারে না এই কর্মমুখর জনতার কর্মস্রোতকে। আকালের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষ।
গ্রাম উজাড় হয়েছে। তবু দুর্ভিক্ষের কাছে হার মানেনি তারা। জীবনের সমস্ত ক্লান্তশ্বাসকে পিছনে ফেলে তারা নতুন উদ্যমে চাষের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। দু-চোখে তাদের রঙিন স্বপ্ন- সবুজ ফসল এবার সুবর্ণ যুগ নিয়ে আসবে।
সঠিক অর্থ অভিধান
বৃষ্টিমুখর –– বৃষ্টি পতনের ধ্বনিপূর্ণ। ঘোষিত — প্রচারিত।
আত্মদান-পরার্থে নিজের জীবন দান। ঢেঁকি- ধান ভানবার যন্ত্রবিশেষ। মজা নদী-বুজে যাওয়া নদী। অমর-চিরজীবী, চির অম্লান। ইশারা-ইঙ্গিত, সংকেত। ঘাগরা-কোমর থেকে হাঁটু কিংবা আরও বেশি পর্যন্ত ঝোলানো মেয়েদের পোশাক। দাওয়া-বারান্দা, রোয়াক। সান্ধ্য-সন্ধ্যাকালীন। আকাল-দুর্ভিক্ষ, দুঃসময়। কিষাণ-কৃষাণ, কৃষক, চাষি। দিশাহারা-দিভ্রান্ত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জনমত-সাধারণ বা অধিকাংশ লোকের অভিমত। ধ্বনি-শব্দ, রব।
১. নীচের শব্দগুলির অন্তত দুটি অর্থ লেখো এবং দুটি পার্থক্য বাক্যে প্রয়োগ করো:
কাঁটা, তাল, জোড়া, সারি, মজা, পাশ।
উত্তর:
২. নীচের শব্দযুগলের অর্থ পার্থক্য নির্দেশ করে দুটি আলাদা বাক্য তৈরি করো:
কাঁটা–পার–জড়ো–সব–দীপ
কাট–পাড়–জড়–শব–দ্বীপ
উত্তর–
৩. ঠিক বানানটি বেছে নাও:
ব্যাস্ত/ব্যস্ত, সান্ধ্য/সান্ধ, দূর্ভিক্ষ/দুর্ভিক্ষ, বন্ধু/বন্ধু, ধ্বনি/ধনি, সুবর্ণ/সুবর্ন।
উত্তর:
৪. নীচের শব্দগুলির কোল্টিন্ট বিশেষ্য এবং কোল্টিন্ট বিশেষণ বাছাই করে আলাদা দুটি স্তম্ভে সাজাও। এরপর বিশেষ্যগুলির বিশেষণের রূপ এবং বিশেষণগুলির বিশেষ্যের রূপ লেখো: লাজুক, ব্যস্ত, মাঠ, সন্ধ্যা, গ্রাম, ঘর, ঘোষিত, চাষি, জল, ফসল।
উত্তর:
৫. বিপরীতার্থক শব্দ লেখো:
মুখর, অহংকারী, অন্ধকার, একটানা, বিচিত্র।
একই রকম।
উত্তর:
৬. ‘ঘড়ির কাঁটা’-এখানে ‘ঘড়ি’ আর ‘কাঁটা’ এই দুটি শব্দের মধ্যে সম্বন্ধ তৈরি করেছে ‘র’ বিভক্তি। ‘ঘড়ির কাঁটা’-কে আমরা তাই বলবো সম্বন্ধ পদ। এই কবিতায় এই রকম আরও ক’টি উদাহরণ খুঁজে পাচ্ছো, লেখো। একটি করে দেওয়া হল-তালের সারি।
উত্তর:
৭. সন্ধিবিচ্ছেদ করো:
বৃষ্টি, অহংকার, স্বাগত, পরস্পর, দুর্ভিক্ষ।
উত্তর: ।
৮. নিম্নরেখ পদগুলির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো:
৮.১ রাত্রি এখানে স্বাগত সান্ধ্য শাঁখে।
উত্তর:
৮.২ এখানে সকাল ঘোষিত পাখির গানে।
উত্তর:
৮.৩ এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারোমাস।
উত্তর:
৮.৪ ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে।
উত্তর:
৮.৫ কৃষক-বধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে।
উত্তর:
৯. বাক্য বাড়াও:
৯.১ চলে গেল লোক। (কখন? কেন? কোথায়?)
উত্তর:
৯.২ আজ বিদ্রোহ বুঝি করে। (কে? কখন?)
উত্তর:
৯.৩ ঘোমটা তুলে দেখে নেয় কোনো মতে। (কে? কী?
কোথায়?)
উত্তর:
৯.৪ এ গ্রাম সবুজ ঘাঘরা পরে। (কেমন? কীসের)
উত্তর:
৯.৫ দীপ জ্বলে। (কোথায়? কখন?)
উত্তর:
১০. একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১০.১ ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা কোথায় গিয়ে গিয়ে থেমে গেছে?
উত্তর:
১০.২ তালের সারি কোথায় রয়েছে?***
উত্তর:
১০.৩ কিষাণপাড়া নীরব কেন?
উত্তর:
১০.৪ বর্ষায় কে বিদ্রোহ করে?
উত্তর:
১০.৫ কে গোয়ালে ইশারা পাঠায়?
উত্তর:
১০.৬ রাত্রিকে কীভাবে স্বাগত জানানো হয়?
উত্তর:
১০.৭ কোথায় জনমত গড়ে ওঠে?
উত্তর:
১০.৮ ঠাকুমা কাকে, কখন গল্প শোনান?
উত্তর:
১০.৯ কোন গল্প তিনি বলেন?
উত্তর:
১০.১০ সকালের আগমন কীভাবে ঘোষিত হয়?
উত্তর:
১০.১১ কবিতায় কোন্ কোন্ জীবিকার মানুষের কথা আছে?
উত্তর:
১১. আট-দশটি বাক্যে উত্তর দাও:
১১.১ এই কবিতায় বাংলার পল্লিপ্রকৃতির যে বর্ণনা আছে তা নিজের ভাষায় সংক্ষেপে লেখো।***
উত্তর:
১১.২ কবিতাটিতে গ্রামীণ মানুষের জীবনযাপনের যে ছবিটি পাও
তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।***
উত্তর:
১১.৩ আকাল ও দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষাপটে মানুষের সম্মিলিত শ্রম আর জীবনীশক্তি কীভাবে বিজয়ী হয়েছে, কবিতাটি অবলম্বনে
তা বুঝিয়ে দাও।***
উত্তর:
১২. ব্যাখ্যা করো:
১২.১ ‘এখানে বৃষ্টিমুখর… ঘড়ির কাঁটা।’
উত্তর:
১২.২ ‘এ গ্রামের পাশে… বিদ্রোহ বুঝি করে।’***
উত্তর:
১২.৩ ‘দুর্ভিক্ষের আঁচল…কাজ করে।’
উত্তর:
১২.৪ ‘সারাটা দুপুর… বিচিত্র ধ্বনি ওঠে।’
উত্তর:
১২.৫ ‘সবুজ ফসলে সুবর্ণ যুগ আসে।’
‘উত্তর:
১৩. তোমার দেখা একটি গ্রামের কথা ডায়েরিতে লেখো। গ্রামটি কোথায়, সেখানে কোন কোন জীবিকার কতজন মানুষ থাকেন ইত্যাদি জানিয়ে গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, মানুষজনের জীবনযাপন পদ্ধতি, বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধার কথা লেখো। গ্রামটির উন্নতি সাধনে যদি তোমার কোনো পরামর্শ দেওয়ার থাকে, অবশ্যই সে কথা লিখবে।
উত্তর:
সংযোজিত প্রশ্ন
একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১. “এখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গায়ে।”-বৃষ্টিমুখর গ্রামকে লাজুক বলা হয়েছে কেন? (
Open Ended Question)
উত্তর:
২. “এই গ্রাম নতুন সবুজ ঘাগরা পড়ে।”- কবিকে অনুসরণ করে উদ্ধৃত উক্তিটির কারণ ব্যাখ্যা করো। ***
(Open Ended Question)
উত্তর:
৩. “পথ নেই, তবু এখানে যে পথ হাঁটা।”- এর মধ্যে দিয়ে
কবি কী বলতে চেয়েছেন?
উত্তর:
৫. “ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে”- কোন্ গল্পের কথা বলা হয়েছে? এই গল্পের পরে আর কোন্ দৃশ্য গিয়েছে?*** উত্তর: উদ্ধৃত কবিতাংশটি গৃহীত হয়েছে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য প্রণীত ‘চিরদিনের’ কবিতা থেকে।
• ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষের দিনে মানুষের কী অসহায় অবস্থা হয়েছিল সেই গল্পের কথা বলা হয়েছে।
• দুর্ভিক্ষের পর আবার নতুন করে বেঁচে থাকার প্রচেষ্টা শুরু হয়। চারিদিকে দেখা যায় প্রাণের স্পন্দন। সকাল ঘোষিত পাখির ডাকে। কামার, কুমোর, তাঁতি একসঙ্গে কাজ করে। সারাটা দুপুর চাষি জমিতে পড়ে থাকে। কৃষক বধূ জল আনতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় পথে। তার চোখে পড়ে সবুজ ফসলে সুবর্ণযুগ আসে।
৬. “ঘোমটা তুলে সে দেখে নেয় কোনোমতে।”-কে কী দেখে? এই দেখার তাৎপর্য কী?
উত্তর:
ব্যা ক র ণে র স হ জ পা ঠ
১. কারক ও বিভক্তি করো :
১.১ সন্ধ্যা সেখানে জড়ো করে জনমত।
উত্তর:
১.২ এ গ্রাম নতুন সবুজ ঘাঘরা পরে।
উত্তর:
১.৩ গোয়ালে পাঠায় ইশারা সবুজ ঘাস।
উত্তর:
১.৪ পচা জল আর মশায় অহংকারী।
উত্তর:
১.৫ জোড়া দিঘি, তার পাড়েতে তালের সারি।
উত্তর:
২. গদ্যভাষায় লেখো:
২.১ নীরব এখানে অমর কিষাণপাড়া।
উত্তর:
২.২ কিষাণকে ঘরে পাঠায় যে আলপথ।
উত্তর:
২.৩ কৃষকবধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে।
উত্তর :
২.৪ ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে।
উত্তর:
২.৫ এখানে সকাল ঘোষিত পাখির গানে।
উত্তর:
৩. সমার্থক শব্দ লেখো :
বিদ্রোহ, ইশারা, দিশাহারা।
উত্তর: